দেনা পাওনা
বাজারে বা নিকট আত্মীয়ের থেকে দেনা করে মেয়ের বিয়ের পণ বা পাওনা মেটানোর যে সামাজিক রোগ এটাই সেই সমাজে ও এখনও এই অনাধুনিক সমাজে ' দেনা-পাওনা ' নামে পরিচিত। বর্তমান সমাজে এর প্রচলন ব্যাপক হারে বাড়ছে বইতো কমছে না । এখন সমস্যা তুলনামূলক আগের থেকে আরও জটিলও বটে। আগের এই প্রথার প্রচলন রক্ষার বাধ্যবাধকতা কন্যা পক্ষের ঘরে বা বলা যায় ঘাড়ে চাপানোর রীতি ছিল। হ্যাঁ, সেটাও প্রকাশ্যে। এটা ওই পাত্রপক্ষের এক মৌলিক দাবি স্বরূপ পরিবার, আত্মীয় ও এমনকি বন্ধুমহলেও পাত্র তথা নববধূর সামাজিক সম্মানের সাথে সমানুপাতিক হারে সম্পর্কিত। এখনও যে এই মধ্যযুগীয় পশ্চাৎগামিতার উদাহরণ সমাজে পাওয়া যায়না এমন টা ভাবার কোনো কারণ নেই। তুলনামূলক এখন স্বচ্ছল কন্যার পিতার সংখ্যা সমাজে অনেক বেশি থাকায়, এই দেনা পাওনার প্রচলনে প্রয়োজনীয় জ্বালানির অভাব হয়না। এখন এই প্রথার মাধ্যমও গেছে বদলে। এখন আর এটাকে পণ বলে কম কিন্তু মেয়ের প্রতি বাবার ভালোবাসা বলে বেশি চালিয়ে দেওয়া হয়। মানে কন্যার বাবার টাকা যত বেশি, কন্যার প্রতি তারা ভালোবাসাও ততটাই বেশি, অন্তত এই বার্তা টুকুই পাওয়া যায়। বা বলা যায়, শ্বশুরবাড়িতে কন্যার সম্মান ও যত্নের হারের সমানুপাতিক হবে কন্যার বাবার দেওয়া পনের পরিমাণ। এখন নগদ , ভরি এই সবের বদলে, বা বলা ভালো এই সব সমেত সঙ্গে ফ্ল্যাট বাড়ি, বা বিলাস বহুল গাড়ি বা কখনো বাইক এই সবের প্রতিযোগিতা চলে। আগে এই পণ প্রথা পাত্রপক্ষের পিতার বন্ধু মহলে মর্যাদা বৃদ্ধিতে সহায়ক ছিল, কিন্তু এখন সেটা কন্যা পক্ষের পিতার বন্ধুমহলে অহংকার বলে গণ্য করা হয়। এই দূরারোগ্য রীতি সমাজে এখন অঘোষিত ভাবে জীবিত। সময়ের সাথে সামাজিক জীবনে আর্থিক স্থিতি আসবে, এটা কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু আমরা সামাজিক কুপ্রথা গুলি স্বমূলে নির্মূল করার কথা কখনো ভাবি না। আজও কতশত নারী পরিবারে ও সমাজে সমান ভাবে বঞ্চিত, লাঞ্ছিত অত্যাচারিত, আর এই পণ প্রথার প্রচলন এর অন্যতম একটি কারণ। আর নারী অত্যাচারিত হচ্ছে মানেই সেটা পুরুষের হাতেই হতে হবে, এমন ভাবারও কোনো কারণ নেই। সংখ্যায় এমন অত্যাচার অনেক বেশি যেখানে একজন নারী একজন নারির হাতেই অত্যাচারিত হয়ে থাকে। একজন নববধূর কানে গঞ্জনা, ও অপমানের ঝড়ো বাতাস মূলত আসে শ্বাশুড়ি মা, বা শশুর বাড়ির অন্যান্য মহিলা সদস্যদের থেকেই। কতশত জীবন বিসর্জন হয়ে গেছে, আর এই জাতীয় বিসর্জন থেকে মুক্তি পেতে হলে চাই শিক্ষা। একমাত্র প্রকৃত শিক্ষাই পারে মেয়েদের আর্থিক তথা সামাজিক স্বাবলম্বী করে তুলতে। মেয়েরা একমাত্র নিজেদের অধিকার তখনই বুঝে নিতে পারবে , যখন তারা আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। আমাদের দেশে নারীশিক্ষার আলো রামমোহন, বিদ্যাসাগর , বেগম রোকেয়া ও অন্যান্য গুনি মানুষের হাতে অনেক আগেই জ্বলেছে, কিন্তু সেই আগুন , সেই আলো যথেষ্ট নয় আজও, আমাদের আরও উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন। নিশ্চই কিছু অল্প সংখ্যায় মহিলারা আজ বিভিন্ন পেশায় নিজেদের প্রতিনিধিত্ব প্রদর্শন করছেন , কৃতিত্ব ও কর্তৃত্ব অর্জন করছেন, কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে আজও ব্যাপক হারে হয় কন্যা ভ্রূণ হত্যা, আজও হয় নাবালিকার বিবাহ, আরও আজও হয় ধর্ষণ, সুতরাং কিছুই বদল হয়নি। আর কিছুই বদল হবে না যতদিন না আমাদের সংখ্যাধিক ভারতীয় মেয়েরা প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে। আমাদের সেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে সকলকে একত্র হয়ে কাজ করা উচিত, আমরা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের সুস্থতা ও সহযোগিতা কামনা করি।
নমস্কার।
🙏
পণপ্রথা থাকছেই, কিন্তু, পণপ্রথা আর দাবী বা ভিক্ষা থাকছে না। পণ এখন দুই পক্ষের অহংকার। বিষয়টা সত্যিই ঘটছে আজকের দিনে। খুব সুন্দর উপস্থাপনা। অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
ReplyDeleteধন্যবাদ ভাই...🙏
Deleteএগিয়ে যাও বন্ধু।
ReplyDeleteউৎসাহ পেলাম...🙏
DeleteOur so called modern life is digitalized and our brutality is becoming more and more polished.Nothing is going to be changed until and unless we are changing our mindset.Anyway, proud to feel that you are expressive enough to criticize the horrid fact.Keep it up 👌
ReplyDeleteI see you being anonymous in my comment box but
Deletestill but still your words will inspire me to be more vocal in future... Thank you 🙏