Tuesday, March 21, 2023

বসন্তের রঙ 💐

  



বসন্তের রঙ


এমনিতে সে নবীনা, চঞ্চলা... প্রাণ বন্ধু বলাই শ্রেয় কিন্তু দেখেছি যেকোনো উদ্যোগ বা দায়িত্ব পালনে আত্মবিশ্বাস ও স্বতস্ফূর্ততায় সে মুহূর্তে কেমন যেনো দিদি হয়ে ওঠে আমার। কি জানি, এখন এই আমি সর্বদা স্বাধীন সৈনিক তার ওই আদেশ পেতেই পছন্দ করি। তার প্রতি নির্ভরশীলতা নিজের স্বাধীনতার পরিপন্থী বলে যেনো মনে হয় না কই। তার মার্জিত সহজ আচরণ, শালীনতা , উদার মানসিকতা তার প্রতি আমার নির্ভরশীলতা বাড়ায় বই কমায় না। এটা সত্যি যে এই সৌন্দর্যের প্রশংসায় ভাষার অভাববোধ করছি। এক নিঃশর্ত সৌন্দর্য্য শাসন তার মুখবয়বে সব সময় মাখা, ঠিক মা যেমন সন্তনেরে করে...


শাড়িতে দেখেছি তাকে, লাল পাড় আর হলুদে, দেখেছি বেনিতে তার ফুল, দেখেছি তার অলক্ষ্যে, দুর হতে বেশি করে... তার চোখে চোখ রেখে তাকে দেখা না দেখার সমান , সেই  স্পর্ধা আমি করিনা, তাহলে তার অনেক কিছুই দেখা হয় না, তাই দুর থেকেই সই... 

হ্যাঁ শুধুই দেখেছি... নিজের মনের গলায় দড়ি বেঁধে শুধুই তাকিয়ে থেকেছি... দেখেছি তাকে পরিপাটি আঁচলে, দেখেছি তাকে শাড়ির কুঁচির দোলায়, ভাঁজে ও ওঠা নামায়... পাশ দিয়ে দূরে হেঁটে যেতে, সবাইকে নিয়ে.., একসাথে হাসতে, হাসাতে, খেতে, খাওয়াতে। 

শুধু আমি একা নই, আমরা অনেকেই তাকিয়ে থেকেছি যখন সে একদিন নেচেছিল বসন্ত উৎসবে ।


সেইদিন লেগেছিল বসন্তের রঙ, মনে। মাখিয়ে ছিল সে, নিজ হাতে... কোনো এক অজানা অভিমানে...

তাকে স্বীকার করেছি গোপনে, মনে মনে। করেছি পূজা স্বপনে... অনুভব করেছি এই নারী, শাড়িতে পুরুষ মানুষকে গলায় নিঃশর্তে পড়াতে পারে দড়ি...

কোথাও এক লজ্জা দিয়ে যায় যেন, এই লজ্জা সেই লজ্জা নয়, এটা সেই লজ্জা যার সামনে যেতে পুরুষ ভালোবাসে, এই লজ্জায় হার স্বীকারে কোনো লজ্জা নেই... এই লজ্জায়  মৌনবাসে বনবাস যাওয়া যায়...

প্রকাশ্য প্রশংসা ? না না। এটায় আশঙ্কা আছে। তাকে হারানোর আশঙ্কা, নষ্ট করে ফেলার আশঙ্কা, আশঙ্কা মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবার... তাই এই লেখার আশ্রয় নিয়েছি। অনুভব করেছি কেনো মানুষ তার জীবনের অমূল্য সম্পদ গুলোকে নিভৃতেই লালন পালন করে, অন্তরালে। সে যেন সর্বদাই ভালো থাকে, সুখী হয়...। 


নজর কাড়ে... তাই নজর লাগে। জীবনে হারিয়েছি অনেক, পেয়েছিও অসংখ্য।তবুও তাকে ওই না পাওয়ার তালিকায় ভালোবাসতে ইচ্ছা হয় না।  তাকে সবেতে মিশিয়ে ফেলেছি, চিনি আর দুধ যেমন মেশে একে অপরের সাথে। আবার কি নিয়ন্ত্রণ হারাব? না থাক... অসংখ্য আশঙ্কায় মন ভিজে... নতুন সূর্য উদয় না হলে রৌদ্রে মেলবো কী ভাবে?...এই  প্রশ্নের উত্তর অজানাই থাক...


 তোমায় প্রকাশ করতে গিয়ে দেখি আমি পুরির সমুদ্র সৈকতের সামনে দাড়িয়ে...🌼💞


Monday, March 20, 2023

চা-বিস্কুট 😃

 





মলয়দার বাড়িতে গিয়েছি, দাদা কে ডাকতে, ক্রিকেট খেলব। দাদা, প্রাতকার্যে হালকা হতে ব্যস্ত, তাই বৌদি আমাকে একটু বসতে বললে। আমি বসে, হতে দৈনিক পত্রিকা। আমার যখন পত্রিকার পাতায় এসএসসি প্রার্থীরা আন্দোলনের 750 দিন পার করেছে, ঠিক তখনই মলয়দার বউ তাদের 1 বছরের বাচ্ছা টাকে খাওয়াতে খাওয়াতে সামনের সোফায় বসলো। ছেলে সে তো কিছুতেই খাবে না, আর মা তো মা-ই, ছাড়বে কেনো...! বলে, " ওয় কাকু এসেছে ..! এখুনি ধরে নিয়ে যাবে তোকে! খেয়ে নে তাড়াতাড়ি! নাহলেই বলে দেবো, নিয়ে চলে যাবে। কাকু খুব রাগী, ধরে নিয়ে গিয়ে বেধে রেখে দেবে একদম! " ছেলে আমার দিকে হাঁ করে দেখলো, আমি একটু হাসলাম মুখ টিপে... আর তার মা, অমনি ছেলের খোলা মুখ পেয়ে যতটা খাবারের মন্ড যায়, তার থেকেও বেশি ছেলের মুখের ভেতর ঠেসে ঢুকিয়ে দিলো... মাইরি! সত্যি বলতে বৌদির ছেলে খাওয়ানোর টেকনিকে আমিও হাঁ , তবে আমার মুখ আমার দুহাতে চাপা ছিল। ছেলে ততক্ষনে কী করবে না করবে ভেবে না পেয়ে, অর্ধেক খাবার মন্ড গিলে, অর্ধেক ফেলে , বিষম খেতে খেতে চিল চেচানো শুরু করে দিয়েছে। মলয়দা ভেতর থেকেই ডাক দিল, " কী হলো গো...! এত্ত কাদঁছে কেনো ছেলে টা!!?" বৌদি বলে ওঠে, " ঔ পাশের বাড়ির 'পচা' গো, ওকে দেখেই আমাদের ছেলেটা চেচাচ্ছে, ও কিছু না।" আমি তো অবাক! য ব্বাবা..! আমি মাঝে খলনায়ক! ভাবছি, " শুধু ছেলের কাছেই ভিলেন বানিয়ে এই মহিলা খুশি নয়, ছেলের বাপের কাছেও আমাকে বদনাম করে দিলো। ছেলেটার যে দম আটকে যাওয়া দেখে আমি নিজে আঁতকে উঠেছি সেটা উহ্যই থাক। তা, আমি তো আমার মুখ বন্ধ করে ঢোকগিলে প্যাঁচার মতো বসে। ছেলেটা খুব কাঁদছে দেখে ভয়ে ভয়ে বৌদিকে বললাম, " আমি একটু বাইরে আছি বৌদি , দাদাকে বলে দিও।" বৌদি হেসে বলে, " আরে দাড়াও দাড়াও....! ভাই, তুমি কোথায় যাচ্ছ? একবার ছেলেটাকে ধরতে হবে তোমায়, তোমাদের জন্য চা টা বসাই । দেখো না তোমার দাদার কাজ, ছেলে টা কাদঁছে শুনতে পাচ্ছে না, সে চেম্বার খুঁড়ে পায়খানা করছে যেনো, একবার ঢুকলে হয়, 1 ঘণ্টা ধরে বসেই থাকে, ভেতরে বসে কীকরে কী জানি বাবা! ” আমি কিছু বলার আগেই ছেলেকে আমায় ধরিয়ে দিল বৌদি। এখন ওদের ছেলে, আমার কোলে। মনে হচ্ছে সকাল বেলা প্রতিবেশীর ছেলে মানুষ করতে এসেছি। বাচ্ছাটা আমার কোলে চুপকরে গেলো একদম... আমি একটু সাহস করে হাসলাম বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে। কিছু ক্ষণের মধ্যে বৌদি চা বিস্কুট এনে হাজির। হাসি মুখে আমার সামনে চা-টা টাবিলে রেখে দিয়ে, ছেলেকে নিজের কোলে নিল। আমি একটু স্বস্তি অনুভব করে গরম চায়ের কাপে চুমুক দিলাম। বৌদি কিন্তু পাশের সোফায় ছেলের খাওয়া নিয়ে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ছেলে কিন্তু অগ্রিম বিপদ বুঝে ঘ্যান ঘ্যাণ করতে শুরু করে দিয়েছিলো। আমি একটা বিস্কুট দিতে গেলাম ছেলেটিকে , সে বেশ হাত টা বাড়িয়েই ছিল। কিন্তু তখনই বৌদি ছেলের হাতটা সরিয়ে নিয়ে  আচমকা বলে উঠলো, " আরে না না! সকালবেলা চা বিস্কুট ভালো ছেলেদের খেতে নেই বাবা, ও গুলো যারা খায় তারা ভালো নয়, তারা বদমাশ। সোনা আমার, এই কাকুও খুব বদমাশ, ওটা ' পচা ' কাকু, একদম 'পচা'।" আমি সবে একটা কামড় দিয়েছিলাম, অর্ধেক বিস্কুট আমার মুখেই থেকে গেলো আর বাকি টা খাবো কী ভাবে তাই ভাবছি। ছেলে আবারও ”ভ্যা...!” করে... চেঁচিয়ে কেঁদে ওঠে একবার। মলয়দাও ভেতর থেকে বলে, " কী গো...! কী হলো গো ছেলেটার...! বৌদিও উত্তর দেয়, " ওই তো তোমাদের ' পচা ' গো, ওকে দেখেই কাদঁছে, ও কিছু না...!" এটা শুনে বিস্কুট গেলো আমার গলায় আটকে,  এবার আমার নিজের বিষম লাগলো। খুব কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে দেখি চোখে আমার জল, আর মনে মনে কাদঁছি, "মলয়দা গো আমাকে বাঁচাও তুমি, দয়াকরে বের হও, আমাকে কেনো আসতে বললে গো তোমার বাড়ী?" ইতি মধ্যে পিঠে তাল পড়ার মতো দমাস..! দমাস..! করে দুটো শব্দ... দেখি  ছেলের মুখ একদম হ্যাঁ, আর মুখে সেই মন্ড ঠাসা, ছেলে প্রায় আটকে গেলো গেলো দেখে মনে হলো...! একদম ককিয়ে উঠেই দমটা নিয়ে ছেলে যেই না দ্বিতীয় বার চিল চেচানি চেচালো পিঠে আর একটা ' দমাস্ ' করে ঘা! গোটা ঘর ছেলের কান ফাটানো কান্নার চিৎকারে কেপে উঠলো যেন...! তৎক্ষণাৎ, চায়ের কাপ রেখে আমি   দিলাম ছুট...! মলয়দা ততক্ষনে বেরিয়ে, ডাক দিচ্ছে, " ' পচা '...! ওই ' পচা...! ' কোথায় যাস শোন শোন...! আরে চা বিস্কুট টা শেষ করে যা...! কোথায় যাস!" আমি পেছন ফিরে চেচালাম, " মলয়দা...! আমি ভালো ছেলে গো...!, আমি ' পচা ' নয়...!, আমি সকাল বেলা একদম চা বিস্কুট খাই না...!”  ( সমাপ্ত )