প্রতিদিনের দৈনিক পত্রিকা গুলির প্রায় এক রকম অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে তাদের স্ব স্ব পত্রিকায় এক বা একাধিক ধর্ষনের ঘটনার উল্লেখ করা। আর সেখানে যদি কোনো রাজনৈতিক সুগন্ধী দ্রব্য কিছুর সন্ধান থাকে তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই। বেশ কয়েক মাসের খোরাক ওখান থেকেই নিশ্চিত করে ফেলা যায় আর কি। দোষ নেবেন না, আমি তাদের কোনরূপ ত্রুটির কথা বলছিনা। বেশ কিছু পত্রিকার সাংবাদিকতা এবং অধিকাংশেরই সম্পাদকীয় কলম গুলি অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও গুরুত্ব সহযোগে পাঠ করেন এমন পাঠকের সংখ্যাও নেহাৎ কম নয় কিন্তু তুলনায় অতি নগণ্য।
লক্ষণীয় যেটা, তা হল অনভিপ্রেত ঘটনাগুলির নৃশংতায় ঘটনাটির প্রকৃত প্রতিকার করার স্বাভাবিক মানসিকতাই হারাতে বসেছি আমরা। নির্যাতন বিরোধী কোনো মন্তব্য করার পরিবর্তে ভবিষ্যৎ নির্যাতনকাীদের কাছে অভাগা নির্যাতিতার নির্যাতনের সময়কালীন দানবীয় অমানুষিক তুলনামূলক লঘু যন্ত্রণা স্বীকারের প্রার্থনাই আমাদের কাছে শ্রেয় বলে মনে হচ্ছে। আশ্চর্য!
অবশ্য আধুনিক নারীদের বেশভূষা নিয়েও অনেক অভিজ্ঞ বাগ্মী দের প্রশ্নের সাক্ষাৎকার পড়েছি। যারা বলছেন তারা নিজেরাও জানেনা যে , তারা অচেতন ভাবেই নারী শরীরের প্রতি তাদের বস্তুগত দুর্বলতা প্রকাশ করছেন , আর শুধু তাই নয় , সেই দূর্বলতা নিবারণ করার কোনো সদিচ্ছাই তাদের মধ্যে নেই সেটাও স্পষ্ট ! কেনো যে এগুলি পত্রপত্রিকার পাতায় জায়গা পায় জানিনা।
ওনারা বেশ ভালোই বুঝতে পারছেন , যে শিকল আর পর্দার সুকৌশলী ব্যবহারে নারীদের আবদ্ধ রাখতে তারা কোনো এক কালে সমর্থ হয়েছেন, আজ ঐ বাঁধন আর আবরণ গুলি সব দুর্বল হয়ে পড়েছে তাদের কাছে! আজ এই নারী পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি শক্তশালী যোগ্যতার বলে! সাম্প্রতিক " নীর্ভয়া" তাদের ভয় শেষ করেছে...!
মজার বিষয় হল, ঐ পত্রিকার পাতাতেই কখনো সখনো বিদ্যুৎ চমকের মত কিছু মহীয়সিদের দেখি যারা বাস চালক, আবার কেউ কেউ তো এমন ভালো লাঙল চালায় যে তাদের বাবাদের বলদের অভাবটাই মিটিয়ে দিতে পারে!
একজন তো দেখলাম ১২০০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়েছে তার অসুস্থ বাবাকে সাইকেলের পিছনে বসিয়ে , না অসুস্থ হতে হয়নি তাকে।
আমি তো দীর্ঘ অপেক্ষায় আছি পত্রিকার পাতায় ট্রাক চালদের জায়গায় বেশ কিছু সাহসিনী দের দেখবো বলে। খেলার মাঠে, কুস্তির আখরায়, অলিম্পিক থেকে শুরু করে পড়াশোনা... কোথায় নেই তারা!
তবে, সকল বেসরকারী বহুজাতিক কোম্পানি গুলি বেশ ভালই জানে আধুনিক নারীদের প্রকৃত আসনটির মর্যাদা। কলসেন্টার থেকে ঠিক বিপরত লিঙ্গের সুশোভন গলার আওয়াজ ই আমরা শুনতে অভ্যস্ত। যেকোনো শহুরে বেসরকারী সংস্থায় রিসেপশন এর আসনে কিন্তু মহিলারাই বিদ্যমান আজও। বিমান পরিষেবা গুলিতে পুরুষ এয়ারহস্ট সংখ্যায় অতি নগণ্য।
শার্ল ঠুকরাল এর নাম মনে আসে, প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনি বিমান চালিয়েছেন। কোথায় নেই? হ্যাঁ পুরুষের বিশ্বাসে নেই, হয়ত তাদের ঈর্ষার স্বীকার ।
কতদিন কতজনের লাশ নিভৃতে পুড়িয়ে নিজেদের পাখি পড়াতে থাকবে এই সমাজ? কাউকে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি? আবার সেও যদি কোনো নেতা মাথার ছেলে হয় তো শাস্তি উহ্য সেখানে...
পুরুষতান্ত্রিকতা র বেড়াজাল টপকে একজন নারীকে তার যোগ্য মর্যাদার অধিকারিণী ভাবাটা খুব একটা সহজ কাজ তো নয়! ভোগ্যপণ্য আর নারী যেন পুরুষের কাছে সমান অধিকার দাবিকরে থাকে এই সমাজে , আর এটাই যেন বহাল রাখা হয় সেই সম্পর্কে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও নিশ্চিত করা।
সংগঠিত ও অসংগঠিত উভয় ক্ষেত্রেই নারীদের সামাজিক বিদ্যমানতা অত্যধিক আবশ্যিক যদি আমরা একান্তই ওই অনভিপ্রেত ঘটনাগুলির ভবিষ্যৎ বীজ গুলো নষ্ট করার পক্ষপাতি হয়েথাকি! এর সাথে যুক্ত হতে হবে উপযুক্ত পারিবারিক শিক্ষা যেটা কিনা অদূর ভবিষ্যতে সামাজিক শিক্ষার দিকে এগিয়ে যাবে। আমরা নারীদের ঘরবন্দী করে ঘরের বাইরে তাদের যোগ্য মর্যাদা দাবি করতে পারিনা! তাদের অধিকার দাবিকরার অধিকার তাদের হাতেই থাক! নারীদের সংখ্যাধিক্ সামাজিক উপস্থিতি ই পারে তাদেরকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কুদৃষ্টির বাইরে নিয়ে আসতে।
শিশুকাল থেকে পথ চলতে চলতে একটা সময় আমরা শারীরিক ভাবে প্রকৃত সচেতন হয়ে ওঠার আগেই প্রত্যেকে নারী, পুরুষ হয়ে উঠি। আবির্ভাব ঘটে নারীপুরুষের এক অচেনা পারস্পরিক বস্তুগত আকর্ষণের। এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারির প্রতি বস্তুগত আকর্ষণীয়তা নিবারণের জন্য যেটা প্রাথমিক ও অবশ্য প্রয়োজন তা হলো দুই জাতির মধ্যে এক সামঞ্জস্য পূর্ণ সামাজিক বিদ্যমানতা ও পাশাপাশি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান যেটার অভাব এই বর্তমান সমাজে প্রতি পদে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
দারুন।
ReplyDeleteThis comment has been removed by a blog administrator.
Delete